মঙ্গলবার, ১৫ Jul ২০২৫, ০৭:০৩ অপরাহ্ন
মরজাল ভূমি অফিসে ঘুষ ও দুর্নীতির রাজত্ব – নায়েব ও দালালের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ জনসাধারণ
নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি:
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নায়েব ও তার সহযোগী কথিত দালাল জাহিদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ নানা অনিয়মের কারণে সাধারণ মানুষ আজ চরম ভোগান্তির শিকার।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ভূমির নামজারির ফি ১,১৫০ টাকা হলেও নায়েবের দালাল জাহিদ সর্বনিম্ন ৬,০০০ টাকা আদায় করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, কাগজপত্র সঠিক থাকলেও সাধারণ, অশিক্ষিত মানুষের কাছ থেকে ভুল বুঝিয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নায়েবের যোগদানের পর থেকেই দালাল জাহিদের মাধ্যমে ঘুষের এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে। মাসে প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমনকি জমির পর্চা উত্তোলন, নামজারি, জমিভাগ, খাজনা প্রদানসহ প্রতিটি সেবা গ্রহণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। চুক্তির টাকা না দিলে কোনো কাজই সম্পন্ন হয় না। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র নায়েব নিজের কাছে রেখে দেন এবং কার্যক্রম বন্ধ করে দেন, যতক্ষণ না গ্রাহক দালালের কাছে টাকা দিয়ে যান।
সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা যায়, অফিসে গিয়ে সরাসরি সেবা নিতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। কিন্তু বাইরে অপেক্ষমাণ দালাল জাহিদের মাধ্যমে টাকা দিলে সহজেই সব কাজ হয়ে যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই অফিসের নিয়ন্ত্রণ একপ্রকার দালালের হাতে চলে গেছে।
এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী বলেন, “সব কাগজ ঠিক থাকা সত্ত্বেও আমাকে পুরনো মালিকদের ওয়ারিশ সনদ আনতে বলা হয়। এসব হয়রানি শুধু দালাল ছাড়া গেলে হয়।”
জানা যায়, একসময় সাধারণ কৃষক হিসেবে পরিচিত জাহিদ এখন কয়েক লাখ টাকার মালিক। ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে চলাফেরা করেন এবং নিজেকে নায়েবের সহকারী হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি এক সাংবাদিকের ভাই বলে দাবি করলেও, তদন্তে তার এই দাবিও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
এই বিষয়ে একাধিকবার মরজাল ভূমি অফিসের নায়েবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। স্থানীয় দোকানদার ও পথচারীদের ভাষ্যমতে, নায়েব ও জাহিদের যৌথ দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টির গভীরে তদন্ত করে পরবর্তী কয়েকটি পর্বে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে রায়পুরা উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান রুবেল জানান, “আমি সদ্য যোগদান করেছি। অভিযোগগুলো গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখবো। যদি কোনো কর্মকর্তা দুর্নীতিতে জড়িত থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”